বন্দর প্রতিনিধি: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বন্দরের লাঙ্গলবন্দে শুক্রবার থেকে উৎসব মুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে দুই দিন ব্যাপী অষ্টমী স্নানোৎসব। হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, ”হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর ; এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় হাজার হাজার পূণ্যার্থীরা আদি ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানে অংশ নিচ্ছেন। স্নানের সময় ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা , হরিতকি, ডাব, আম পাতা ইত্যাদি পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে নদের জলে তর্পণ করছেন তারা। শুক্রবার স্নানের লগ্ন শুরু হয় রাত ৯টা ১৫ মিনিটে। লগ্ন শুরুর পরপরই স্নানার্থীদের ঢল নামে ব্রহ্মপুত্র নদে। ১৩টি স্নানঘাটে দল বেঁধে, সপরিবারে কেউবা এককভাবে ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী স্নানে অংশ নিচ্ছেন। তীর্থকেন্দ্র এবং স্নানঘাট গুলোতে ছিল উপচে পড়া ভীড়। বিশেষ করে রাজঘাট ও গান্ধীঘাটে স্নানার্থীদের সমাগম ছিল চোখের পড়ার মত। ৬ বছর পূর্বে রাজঘাটের কাছে ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ার গুজবে হুড়োহুড়িতে ১০ জনের প্রাণহানী ঘটে। ঘটনাটি স্নানার্থীদের স্মরণ থাকলেও এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোন ভয় বা আতংক নেই বলে জানান তীর্থযাত্রীরা। এবার সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চলছে স্নানোৎসব। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী লাঙ্গলবন্দ স্নানে অংশ নিয়েছেন বলে স্নান উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতিমধ্যেই লাখ লাখ পূণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে। তাদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে লাঙ্গলবন্দ। কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে আসা তীর্থযাত্রী গীতারানী(৫৫) জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয়, ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়। তাই তিনি প্রতি বছর স্নানোৎসবে অংশ নেন। এবার তিনি একা আসেননি। নদী পথে ট্রলার নিয়ে পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে স্বপরিবারে লাঙ্গলবন্দে এসেছেন। শুক্রবার ৯ টা ১৫ মিনিটে শুরু হওয়া এই পূণ্যস্নান শেষ হবে শনিবার রাত ১১ টা ১৭ মিনিটে। বন্দর থানা অফিসার ইনর্চাজ দিপক চন্দ্র সাহা গনমাধ্যমকে জানান, অষ্টমীস্নানকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দ। পুলিশ , র্যাব ও আনসারের প্রায় ১৫’শ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। পূর্নার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে ৭টিওয়াচ ট্ওায়ার ও ১০টি চেকপোস্ট। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে তীর্থস্থানের ৩ কিলোমিটার এলাকা। লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম ,১ নং ঢাকেশ্বরী টিন লাইন ও বনগুন মিলন সংঘ, নিপসম, সেবা সংঘ, হিন্দু কল্যাণ পরিষদসহ অর্ধশত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দর্শনাথীদের খাবার সরবরাহ ও অন্যান্য সেবা প্রদান করছে।বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে দেয়া হচ্ছে পূণ্যার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা। এ দিকে স্নানোৎসব উপলক্ষে লাঙ্গলবন্দে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে লাঙ্গলবন্দ পূণ্যস্নান উদযাপন পরিষদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ একেএম সেলিম ওসমান। স্নান উদযাপন পরিষদের আহবায়ক সরোজ কুমার সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মঞ্জুরুল হাফিজ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম-বার, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রি এর সভাপতি খালেদ হায়দার কাজল। ওই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা বি.এম. কুদরত-এ-খুদা, বন্দর থানার অফিসার ইনর্চাজ দীপক চন্দ্র সাহা, বন্দর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্ল্যাহ সানু প্রমুখ।