মোঃমিজানুর রহমান বাহার ভালুকা উপজেলা প্রতিনিধি :
গ্রাম বাংলার কৃষকরা জমির আইলে সীমানা খুঁটি এবং বাড়ির বেড়ার জন্য যে গাছ লাগিয়ে থাকতো তার নাম পরিজাত/কাঁটা মান্দা। এক সময়ের অতি পরিচিত এই মান্দার গাছ এখন নতুন প্রজন্মের কাছে অচেনা ও অজানা।কোনরকম পরিচর্যা ছাড়াই এই গাছ দ্রুত বাড়ে । বসন্ত এলে প্রাণ খুলে দেখিয়ে দেয় লাল টুকটুকে ফুলের বাহার ।
কিন্তু মেহগনি, শিশুসহ আগ্রাসী প্রজাতির গাছের কারণে ও যত্নের অভাবে ভেষজগুণ সম্পন্ন এই পরিজাত/ কাঁটা মান্দা গাছ ধীরে ধীরে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ইটের ভাটায় কাঠের জোগান ও দিয়াশলাই তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে পরিণত বয়সের মান্দার দেখা ভাগ্যের ব্যাপার।
কাঁটা মান্দার হল বৃক্ষ জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ বিশেষ। এর (বৈজ্ঞানিক নাম: erythrina fusca)। এটি Fabaceae পরিবারের সদস্য। ইরিথ্রিনা গণভুক্ত উদ্ভিদ সমূহ একত্রে মান্দার বা মাদার নামে পরিচিত। বাংলাদেশে বেশ কয়েক প্রজাতির মান্দার গাছ দেখতে পাওয়া যায়। কাঁটা মান্দার গাছ পানিয়া মান্দার নামেও পরিচিত।
শীতের শেষে যখন বসন্তের হাওয়া লাগে, তখনই নানা ফুলের সঙ্গে গ্রাম বাংলায় মান্দার ফুল দেখা যায়। এটি বুনো গাছ। তাই যত্ন করার প্রয়োজন হয় না। জলের কাছের ঝোপঝাড়ে বেড়ে ওঠে। কেউ কেটে না ফেললে অনেক বছর বাঁচে। আবার ডাল কেটে লাগালেও গাছ হয়। বেড়া দিতে, জ্বালানি কাঠ হিসেবে এ গাছের ডাল ব্যবহার করা হয়।
কাঁটা মান্দারগাছের কোনোটির কাণ্ডের গায়ে ঘন ও প্রচুর কাঁটা থাকে, আবার কোনোটির কাণ্ডে কাঁটার পরিমাণ কম। ফাল্গুন মাসে গায়ের গো-শালিক পাখি বাসা তৈরির জন্য এ গাছটিকে বেছে নেয়। এই পরিজাত গাছের বহু ভেষজ গুণ রয়েছে। যেমন-রক্ত আমাশয় :পারিজাত গাছের ছালের রস এক বা দুই চা চামচ একটু গরম করে দুই থেকে চার চা চামচ দুধ মিশিয়ে দুই থেকে তিন খেলে রক্তামাশায় সেরে যাবে ।
বাঘি হলে- কু চকির এদিক বা ওদিক যে দিকেই হোক আর যে কারণেই হোক পরিজাত বা মান্দার পাতা বেটে অল্প করে ওখানে লাগাতে হবে। দুদিনের মধ্যে ওর টাটানি ও ব্যথাটাও চলে যাবে ।
স্তনে দুধের অভাব :পারিজাত বা মান্দার পাতার রস দুই চা চামচ আর ঝুনো নারকেলের দুধ চার থেকে পাচ চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে কয়েকদিন সকালের দিকে খেলে স্তনে দুধের অভাব থাকবে না ।
মাসিক স্রাবের সমস্যায় :মাসিক স্রাবের সমস্যা হলে পারিজাত পাতার রস সেবন করলে উপকার পাওয়া যায় ।
জ্বর হলে :পারিজাত গাছের ছাল রস অল্প গরম করে তার সাথে মধু মিশিয়ে সকাল বিকেল খেলে জ্বর খুব ভালো হয়ে যায় ।
কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, গাছপালা কাটার মহোৎসব, বন জঙ্গল কেটে সাবাড় করা ও নতুন করে চারা রোপনের উদ্যোগের অভাবে এ ভেষজ গুনসম্পন্ন উদ্ভিদটি আজ বিলুপ্তির পথে।