গাইবান্ধা হতে বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত- ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (৮ম খন্ড)’, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রকাশিত ‘গাইবান্ধার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ গ্রন্থ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তৎকালীন মহুকুমা শহরে প্রবেশ করে গাইবান্ধার তৎকালীন হেলাল পার্কে (বর্তমানে শাহ্ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম) প্রধান ক্যাম্প স্থাপন করে। বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী মহুকুমার বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে এই ক্যাম্পে নির্যাতনের পর তৎসংলগ্ন শাহ কফিল উদ্দিনের প্রাচীর বেষ্টিত নির্মাণাধীন গোডাউনে হত্যা করে মাটিচাপা দিত। সে কারণেই এটিই ছিল গাইবান্ধার প্রধান বধ্যভূমি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহনের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শাণিত করতে অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি একাত্তরের সকল বধ্যভূমি ও গণকবরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে ২০১০ সালে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তনী হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমিসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প’
গ্রহন করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০১০, ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর প্রকাশিত ২০৪টি এবং ২০১৮ সালের ২৮১টি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) এর ডিপিপিতে গাইবান্ধা জেলার ১১টি বধ্যভূমির মধ্যে গাইবান্ধা
স্টেডিয়াম সংলগ্ন বধ্যভূমির নাম রয়েছে।
সেখানে গাইবান্ধার সদর উপজেলার গোবিন্দপুর মৌজার গোরস্থানপাড়ায় ২২৪৬, ২২৫৩ ও ২৫৫৬ দাগ নং এবং
১০০২ ও ১৭৯৪ খতিয়ান নম্বরের জমিতে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের জন্য নির্ধারন করা হয় এবং ওই স্মৃতিস্তম্ভ
নির্মাণে ৮০ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
গত ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২ গণপূর্ত বিভাগের গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন যে, জমি বুঝে পাওয়া মাত্র কাজ শুরু করা হবে। জেলার একাধিক বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের কাজ শুরু হলেও স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী মহলের প্ররোচনায় এবং আমলাতান্ত্রীক জটিলতায় ভুমি অধিগ্রহনে জটিলতা সৃষ্টি করে জেলার এই প্রধান বধ্যভূমি সংরক্ষন ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের কাজ এখনও শুরু হয়নি।
সম্প্রতি একাধিক সূত্রে জানা গেছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল জমির অধিক মূল্য গ্রহনের লোভে এবং নির্মম গণহত্যার চিহ্ন মুছে ফেলার জন্য ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ওই স্বীকৃত ও সর্বজনবিদিত বধ্যভূমির জমি অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রশাসনকে প্ররোচিত করছে।
মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনা, দেশের কৃতি সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের নামে এবং
গাইবান্ধার সামগ্রিক উন্নয়নে এরকম একটি প্রকল্প গ্রহন নি:সন্দেহে একটি প্রশংসনীয় কাজ।
কিন্তু বধ্যভুমির উপর শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব কোনভাবেই সুবিবেচনা প্রসূত ও গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। প্রভাবশালী ও সুযোগ সন্ধানী ওই মহলটি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে অশুভ পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের একটি মহতি উদ্যোগ কালিমালিপ্ত
হতে পারে। স্থানীয় মহল মনে করছে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতেই এই অপচেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রালয়ের ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী গাইবান্ধা জেলার বৃহত্তম বধ্যভূমিতে একটি দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযেদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার মাহমুদুল হক শাহাজাদা, গাইবান্ধার বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক জি.এম চৌধুরী মিঠু, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রঞ্জিত বকসী সূর্য, গাইবান্ধা পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহ্ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির, গাইবান্ধা জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মারুফ মনা, গাইবান্ধা জেলা নাগরিক পরিষদ, গাইবান্ধা জেলা উন্নয়ন ফোরাম প্রভৃতি সংগঠন সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।