আনিছুর রহমান (সোনারগাঁ প্রতিনিধি): নির্বাচন কেন্দ্রিক বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার এক সপ্তাহ পর আহত একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম- আব্দুল করিম (৬৫)। গতকাল বুধবার বিকেলে পূনরায় সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে সে মারা যায়। নিহত আব্দুল করিম বারদী সেনপাড়া গ্রামের মৃত ইছমত সরকারের ছোট ছেলে। এ ঘটনার পর থেকে পুরো বারদী এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করার প্রস্তুতি নিয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের বারদী বাজার এলাকায় নির্বাচন কেন্দ্রিক বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বারদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল হক ও নাজমুল হক গ্রুপের সাথে জাকির সরকার ও ইব্রাহিম ইবু গ্রুপের বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জের ধরে গত ১৩ এপ্রিল বুধবার সকালে জহিরুল হক ও নাজমুল গ্রুপের সমর্থিত তাজুল ইসলাম প্রতিপক্ষ জাকির গ্রুপের হাসানকে মারধর করে। এ নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে জাকির সরকার ও ইব্রাহিম ইবু ঘটনাস্থলে এসে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জহিরুল হক ও নাজমুলের লোকজন অতর্কিত হামলা চালায়। পরে উভয় গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র, লোহার রড, টেঁটা, রামদা, লাঠিসোটায় সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় এ সংঘর্ষে জাকির গ্রুপের জাকির সরকার, জাকিরের চাচা আব্দুল করিম, জামাল, মাসুম সরকার, বাসেদ সরকার, মামুন সরকার, সামসুল, হুমায়ুন সরকার ও হাসান, জহিরুল পক্ষের তাইজুল ইসলাম, হযরত আলীসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষের পর বারদী বাজারে জহিরুল হকের লোকজন উত্তেজিত হয়ে জাকির সরকারের পক্ষের মামুন সরকার, মাজহারুল সরকার, হাসান, জাহাঙ্গীরসহ ৫-৬ জনের দোকান ভাংচুর করে ও লুটপাট চালায়। এছাড়াও ২টি বাড়িঘরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ ও বারদী পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশের ৩টি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। ঘটনার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এঘটনায় একদিন পর সোনারগাঁ থানায় দূ‘গ্রুপের পক্ষে পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা রুজু করা হয়।
জাকির সরকার ও ইব্রাহিম ইবুর অভিযোগ, বারদি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল হক তার দূর সম্পর্কের ভাতিজা নাজমুল হককে নির্বাচনে প্রভাবিত করে ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত করায়। পরবর্তীতে বারদি বাজারে আমাদের লোকজনকে কোনঠাসা করে রাখে। এ নিয়ে উভয় গ্রুপের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ, দোকানপাট, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। সংষর্ষের ঘটনায় আমাদের গ্রুপের ১৫ জন লোক আহত হয়েছে। স্থানীয় একটি বিস্তস্থ সূত্র জানায়, আহতদের মধ্যে জাকির ও ইবু গ্রুপের আব্দুল করিম সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ছাড়পত্র পেয়ে বাড়িতে চলে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে গতকাল বুধবার পূনরায় সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে সে মারা যায়।
সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, আব্দুল করিম নামে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। নিহত ওই ব্যক্তি সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছিল কি না তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। এবিষয়ে থানায় এখনও পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।