সুমন ইসলাম প্রামানিক,ডোমার (নীলফামারী)
চারদিকে সবুজের সমারোহ। মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে একটি বড় আকারের কড়ই গাছ। তার পাশে রয়েছে বাঁশঝাড়। এই বাঁশঝাড় থেকে উঁকি দিচ্ছে পানকৌড়িসহ বিভিন্ন জাতের ধবল বক, ডাহুক, কোড়া, রাতচরা, ঘুঘু, শ্যামা, দোয়েল, শালিক, বাবুইসহ নাম না জানা আরও অনেক পাখি।
বিকেলের সোনালী রোদে গাছের ডালে ডালে পানকৌড়ির পালক জ্বলজ্বল করছে। এমনি দৃশ্য চোখে পড়ে ডোমার উপজেলা থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে।
ওই ওয়ার্ডটি বর্তমানে পাখিলাগা গ্রাম নামে পরিচিত। এখানে প্রতিদিনই পাখি দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন এলাকার পাখি প্রেমীরা।পাখিগুলো প্রতিবছর ফাল্গুন মাসে আসে এবং আশ্বিনের শেষের দিকে চলে যায়। এই গ্রামে একটি কড়ই গাছের পাশাপাশি প্রায় তিন একর জমির উপর বিশাল বাঁশঝাড়ে গড়ে উঠেছে পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্য।
পাখি গুলো প্রায় ২০০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছে। রাতে পাখি গুলো বাঁশ ঝাড়ে থাকে ভোর হলেই কিচিরমিচির শব্দ করে উড়ে যায় খাবাবের সন্ধানে।প্রতিদিন সকালে এসব পাখির কলকাকুলিতে গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে।
কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি অনার্সের শিক্ষার্থী অন্তরা আক্তার বলেন, এমন সুন্দর দৃশ্য বর্তমানে দেখতে পাওয়া বড়ই কঠিন। সকাল সন্ধ্যায় হাজারোও পাখির কলতানের শব্দ অন্য রকম এক আবহ তৈরি করে। আর তা খুবই আনন্দদায়ক ও মনোমুগ্ধকর। পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
তাই পাখিদের প্রতি সবাইকে সহনশীল হতে হবে। পাশাপাশি পাখি গুলোর নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনিক তৎপরতা আরও জোরদার করতে হবে।
পাখি প্রেমী ওই বাশঁঝাড়ের মালিক মজিদুল ইসলাম বলেন, পাখিদের আবাস এবং খাওয়া গোসলের অসুবিধার কারণে পাখি গুলোকে আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পাখির নিরাপদ অভায়ারণ্য, খাওয়া ও গোসলেন জন্য পুকুর খনন করা দরকার। পাখি যাতে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য গাছের চারা লাগানো প্রয়োজন।
রাতে শিকারিরা যেন পাখি শিকার করতে না পারে তাই চারদিক আলোকিত করার জন্য সোলারের ব্যবস্থা করা হলে এই পাখিগুলো নিরাপদ আশ্রয় পাবে। আমার বসতভিটার উপরে বাশঁবাগানে বিভিন্ন ধরনের পাখির আবাসস্থান হিসেবে প্রায় ২০০ বছর ধরে পাখি গুলো নিরাপদ ভাবে বসবাস করছে। কিছু মানুষ ফাঁদ বসিয়ে পাখি গুলো শিকার করছেন। পাখি গুলো শিকার না করার জন্য বলা হলেও তারা কোন কথা শুনেছেন না
এ ব্যাপরে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
ডোমার উপজেলা রেঞ্চ অফিসার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ওই এলাকায় পাখির আবাসস্থল গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক ভাবেই। বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখিদের অভায়াশ্রম নিরাপত্তায় সব সময় খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। তবে পাখিগুলো রক্ষার্থে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। পাখি গুলোকে ফাঁদ বা অন্য কিছু দ্বারা শিকার করতে না পারে এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি। দীর্ঘদিন থেকেই পাখিরা এখানে বসবাস করছে। আমাদের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা।