গত ১৪ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) গাজীপুরের সালনাতে নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের কাজে বাধা ও ভাঙচুরের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী বুধবার তাদের গাজীপুর আদালতে পাঠান সদর থানা পুলিশ। আদালত ৪ জনকে কারাগারেই পাঠালে জামিনে মুক্তি পায় কলেজের সেই মহিলা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
১৮ ফেব্রুয়ারী ( শনিবার) দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ উত্তর) এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে উপ পুলিশ কমিশনার বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারী শালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কে অপসারণের দাবীতে বিক্ষোভ করা শুরু করে। এসময় বহিরাগত কিছু লোক শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করলে শিক্ষার্থীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় প্রদান করে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে স্কুলে ফেরত যেতে অনুরোধ করে।
এরই মধ্যে বহিরাগত কিছু কুচক্রী ও স্বার্থনেষী মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের ব্লগ করে অধ্যক্ষ কে অবরোধ করে রাখে। পুলিশ দুই পক্ষের সাথে কথা বলে মিমাংসা করার চেষ্টা করতে থাকে এবং পুলিশ অধ্যক্ষ কে উদ্ধার করতে গেলে কতিপয় শিক্ষার্থী ও অন্য স্কুলের ড্রেস পরিহিত বহিরাগতরা পুলিশের উপর হামলা করে এবং পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করে।
এরই প্রেক্ষিতে সদর থানায় একটি মামরা রুজু হয়। উক্ত ঘটনার তদন্তে জানা যায় যে প্রকৃপক্ষে কলেজের ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের দুই পক্ষের বিরোধের সুযোগ নিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীরা সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকসহ বহিরাগতদের উস্কানী দিয়ে উত্তেজিত করার মাধ্যমে পুলিশের উপর হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে নাদিম (১৯) কে গ্রেফতার করে। নাদিম গাজীপুর শিমুলতলীস্থ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) এ কৃষি ডিপ্লোমাতে ৩য় বর্ষের ছাত্র। গ্রেফতারকৃত নাদিম জানায় যে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপি নেতার নির্দেশে সে তার নিজ বাসা হতে সিটি কলেজের ড্রেস পরে (পূর্বে সে সিটি কলেজের ছাত্র ছিল) সহযোগী আরো কয়েকজন মিলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মিশে গিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। তার বাসা হতে হামলার দিন ব্যবহৃত সিটি কলেজের সোল্ডার ব্যাজ ও পোশাক জব্দ করা হয়।
এছাড়াও ঘটনার দিন যে ছাত্রের শার্ট ছেড়াকে কেন্দ্র করে ঘটনার সুত্রপাত হয়েছিল। সেই ছাত্র কে ঐ দিন সকালে মহানগর বিএনপি এর সদর মেট্রো থানার আহবায়ক সদস্য ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সদর মেট্রো থানা আশরাফুল ইসলাম রাসেল এর সাথে আলাপ করার ছবি পাওয়া যায় এছাড়া গ্রেফতার হওয়া নাদিম জানায় যে রাসেল তাকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে যেতে বলে। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রছাত্রীদের উস্কানী দেয়া ও লাইভে এসে বিভ্রান্তিমুলক তথ্য দেয়ার অভিযোগে তিতুমীর কলেজের ছাত্রদলের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহিন মাহমুদ মাসুদ (২৮) কে সালনা হতে গ্রেফতার করা হয়।
উক্ত শাহিন ঘটনার আগের দিন, ঘটনার দিন ও ঘটনার পরের দিন লাইভ করে।। এছাড়াও ঘটনার পরদিন পুরাতন ভিডিও এডিট করে ছাত্র -ছাত্রীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে মর্মে পুনরায় সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে লাইবে প্রচার করার প্রমান হাতে পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা যা তথ্য পেয়েছি তা হলো যে সেই ঘটনার অন্তরালে বহিরাগত কিছু ছাত্র এবং সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের সিনিয়ার কর্মীরা জড়িত ছিল।
এবং তারা কোমলমতি ছাত্রদের ব্যবহার করে তাদেরকে কাজে লাগিয়ে ও বর্তমান যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সেটাকে কাজে লাগিয়ে সরকার কে যেন বেকায়দায় ফেলানো যায় বা সরকার কে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলানো যায় সেই চেষ্টাই তারা করেছে বলে আমার তদন্ত করে পেয়েছি। আমাদের তদন্ত চলমান থাকবে। এছাড়াও পূর্বে আর ৬ জন কে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।
সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম জানান, পুলিশের কাজে বাধা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে সদর থানার উপপরিদর্শক উৎপল বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাছরিনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ, পরের দিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের জামিন মঞ্জুর করেন বিজ্ঞ আদালত।
এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার গাজীপুরে অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। অবরোধের কারণে দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও ওই কলেজের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান ও সালনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান ১০ থেকে ১২ জন বহিরাগত ব্যক্তিকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে নিয়ে যান। এ সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ডেকে আনেন।
তাদের দাবি, নাজমা নাসরিন ওই ছাত্রীকে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ও চরথাপ্পড় মারেন। কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হাসিবুল ঘটনাটি দেখে প্রতিবাদ জানান। এ সময় অধ্যক্ষের কক্ষে থাকা বহিরাগত ব্যক্তিরা হাসিবুলকে মারধর করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে মঙ্গলবার সকালে স্কুলের ভেতরে বহিরাগত মাস্তান দিয়ে কলেজ শাখার কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদে সকাল ১০টার দিকে স্কুল ও কলেজ শাখার শিক্ষার্থীরা পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেয়। একই দাবিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারিও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছিল।