নিজস্ব প্রতিবেদক: মোঃ জালাল উদ্দিন।শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের হুগলিছড়া চা বাগান শ্রমিকের অন্ধ ছেলে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্ধ ছাত্র হরিবল বোনার্জি এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। জন্ম থেকেই চোখে না দেখতে পাওয়া হরিবল নিজের মনোবল আর শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় এ ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়।
মঙ্গলবার ২৯ নভেম্বর ২০২২ইং, বিকালে হরিবল বোনার্জি (১৭) জানায়, আমার বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের হুগলিছড়া চা বাগানে, মা বিশখা বোনার্জি ও বাবা অনিল বোনার্জি দুজনই চা বাগানের শ্রমিক। প্রাথমিক পড়ালেখা শুরু হয় এনজিও ব্র্যাক স্কুল থেকে। সেখান থেকে ভালো ফলাফলে পিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের পাশেই মৌলভীবাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসের আবাসিক হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যায় সে। আরও বলেন, আমি যে পড়ালেখা করে এতদূর এগিয়ে আসতে পারব সেটা কখনো ভাবতেই পারিনি। আমরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর লোক। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের পিছিয়ে পড়া চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে টিউশনিও করিয়েছি। করোনার সময়ে যখন স্কুল বন্ধ ছিল তখন আমার গ্রামের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি।
সে জানায়, পড়ালেখার জন্য আসলে দিনে একটানা ১০-১২ ঘণ্টা পড়তে হয় না। মনোযোগ দিয়ে কয়েক ঘণ্টা পড়লেই হয়। পরীক্ষার হলেও আমি অন্যান্য সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছি। শুধুমাত্র সহযোগী হিসেবে অষ্টম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী ছিল। আমি বলে বলে দিয়েছি আর সে লিখে দিয়েছে। আমার স্বপ্ন ছিল একজন গায়ক হওয়া। অনেকটা পথও এগিয়েছিলাম। কিন্তু আর গায়ক হয়ে উঠা হয়নি। এখন একজন সমাজকর্মী ও শিক্ষক হতে চাই।
হরিবল বোনার্জি তার এ সফলতা সব শিক্ষক, মা-বাবা, সমাজসেবা অফিসের রিসোর্স শিক্ষক, স্কুলের শিক্ষকরা ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সহযোগীকে উৎসর্গ করতে চায়। ভবিষ্যৎ জীবনে সফল হওয়ার জন্য সে সবার কাছে আশীর্বাদ চায়।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ খ ম ফারুক আহমদ বলেন, আমদের একজন অন্ধ ছাত্র হরিবল বোনার্জি এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে গরিব পরিবারের সন্তান। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করে এ ফলাফল অর্জন করেছে। আশাকরি সে তার জীবনে সফল হবে। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।