স্মার্ট ফোন প্রায় প্রত্যেকেরই এখন ২৪ ঘণ্টার সঙ্গী। করোনার সময় থেকে মোবাইলে চলছে পড়াশোনা, মোবাইলে চলছে অফিস। এতে করে মস্তিষ্কের উপর চাপ বেড়েই চলেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, স্মার্ট ফোন রাত দিন আঙুলের নাড়াচাড়াসহ শরীরের বিভিন্ন অসুখের তৈরি করছে। মোবাইল আসক্তির মাশুল দিতে হচ্ছে স্নায়ুর মাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, মোবাইল ব্যবহারের তিনটি আঙুলের ওপর চাপ পড়ে সবচেয়ে বেশি। বুড়ো আঙুল আর তর্জনি দিয়ে টাইপ/স্ক্রল চলে সারাদিন।
আর হাতের সবচেয়ে ছোট আঙুল মোবাইলটা হাতের তালুতে ধরে রাখার সাপোর্ট দেয়। এই তিন আঙুলের মাধ্যমেই শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিন স্নায়ুর চলাচল। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে ওই স্নায়ুগুলোয় চাপ পড়ছে। একসময় তা স্থিতিস্থাপকতা হারাচ্ছে। আর তাতেই বাসা বাঁধছে অসুখ।
চিকিৎসকের বক্তব্য, সারাক্ষণ মোবাইলে লিখলে বুড়ো আঙুল, তর্জনির অতিরিক্ত ব্যবহার হয়। আঙুল দুটির কাছাকাছি থাকা স্নায়ুর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। এই কারণে প্রথমে আঙুল অবশ লাগতে শুরু হয়, তারপর ব্যাথা শুরু হয় কনুইয়ে। মেডিক্যাল পরিভাষায় এ সমস্যার নাম কিউবিটাল টানেল সিনড্রোম।
ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইল ব্যবহারের সময়সীমা জানতে ভারতের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে এক গবেষণা চালিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ। সেই গবেষণার তথ্য বলছে, কলেজে পড়া ছাত্ররা দিনে অন্ততপক্ষে দেড়শো বার নিজের মোবাইল হাতে নেয়।
লকডাউনের সময় থেকে তা দ্বিগুণ হয়েছে বলেই মত অভিভাবকদের। অনেকেই বলছেন, ঘুম থেকে উঠে দীর্ঘক্ষণ হাতে কোনও সাড় থাকছে না। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে নাম্বনেস। বুড়ো আঙুল আর তর্জনির ভিতরকার ‘মিডিয়ান’ আর ‘রেডিয়াল’ নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলেই এমনটা হয়। আর এই তালিকায় শুধু তরুণরা না রয়েছে বয়স্করাও।
প্রযুক্তির উন্নতিতে প্রায় সকলেরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ততা বেড়েছে। যত কথা মোবাইলের মাধ্যমে বলছেন। দীর্ঘক্ষণ মোবাইলে টাইপ করা থেকেই বাড়ছে পিঠের ব্যথা-সহ মেরুদণ্ডের নানা সমস্যাও।
চিকিৎসকের ব্যখ্যা, টেক্সট করার সময় সকলে মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটু ঝুঁকে পড়ে। এতে মেরুদণ্ডটা একটা বিশেষ কোণে বেঁকে থাকে এবং এর ফলে মেরুদণ্ডে যে পরিমাণ চাপ তৈরি হয় তার ওজন ৫০ পাউন্ড।
কেউ দিনে পাঁচ ঘণ্টা টেক্সট করছেন মানে টানা পাঁচ ঘণ্টা একটা ৫০ পাউন্ডের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে রয়েছেন। এই জন্য অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার জন্ম দিচ্ছে পিঠব্যথারও।
এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকরা বলছেন, পিঠার ব্যথা ও স্নায়ুর রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে অকারণে মোবাইল ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। আর বেশি সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।