বন্দরে পরিবেশ দূষণের কারখানা প্রতিনিয়ত বাড়ছেই। যার প্রতিটিই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বন্দরের লক্ষনখোলা এলাকায়, কোওঢালার পর এবার খোদ জেলা পরিষদের সদস্য গড়ে তুলেছেন অবৈধ ব্যাটারি কারখানা। নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাছুম আহম্মেদ কর্তৃক স্থাপনকৃত অবৈধ ব্যাটারি কারখানা পরিবেশ, মানুষ ও প্রাণীর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারখানাটি স্থাপনের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে গুঞ্জন রয়েছে। যে স্থানে অবৈধভাবে কারখানাটি চলছে, সেটা কৃষি ও গোচারণভূমি, জলাশয় ও মানুষের বসতির মাঝেই অবস্থিত। কোনো ইটিপি ও এটিপি ছাড়াই উন্মুক্ত স্থানে ব্যাটারি গলানোর ফলে সিসাসহ দূষিত অন্যান্য বর্জ্য ছড়িয়ে আশপাশের ফসলি জমি ও পানিতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। অবৈধ কারখানাটি চালানোর ফলে পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্য ও বাস্তু সংস্থানের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেখানকার গরুর দুধ, জলাশয়ের মাছ কিংবা শাকসবজি খেলে জনস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, মাছুম আহম্মেদ একজন জন প্রতিনিধি। তিনি জেলা পরিষদের সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়ে পরিবেশর জন্য ক্ষতিকর একটা কারখানা স্থাপন এবং সিসা ও দূষিত বর্জ্যের বিষক্রিয়া কারখানা করা তার উচিৎ হয়েছে কি না এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের। অনেকেই বলেন, আমরা মনে করি, অবৈধ ক্ষতিকারক কারখানা যারা স্থাপন করে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিৎ। এমনিতে নারায়ণগঞ্জে পেপার মিলের অন্তরালে অবৈধ ব্যাটারি কারখানা বন্ধের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের হলেও কোন সুফল পাননি। এলাকাবাসীর এত বাধার পরও নতুন করে গড়ে তুলেছেন অবৈধ ব্যাটারি কারখানা। ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা পরিষদের সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান বলে কথা। সেই মাসুম আহম্মেদ বছর জুড়েই সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকেন। অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা, ব্যাটারি কারখানা, জুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণ, এমনকি টেন্ডারবাজিতে দেখা মিলেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বন্দরে কেওঢালা এলাকায় অবস্থিত পেপার মিলের অন্তরালে গড়ে তুলেছে অবৈধ ব্যাটারি কারখানা। কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ও পুরাতন ব্যাটারি পোড়ানোর ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ বিপর্যস্ত। অবৈধ ব্যাটারি কারখানা বন্ধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন করেছিল পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন সোসাইটি ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে অংশ নেন পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন সোসাইটির বন্দর উপজেলা শাখার পরিচালক হাফেজ মো. পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক গাজী এম এ শাহ আলম, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী মো. আলী নূর ইসলাম, বন্দর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম জুয়েল, জুয়েল ভূঁইয়া, আবুল কাশেম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুল মতিন, সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, আক্তার হোসেন মোল্লা ও শেফালী বেগম প্রমুখ। মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি। উল্টো ফয়দা নিয়েছে। এ ব্যাটারি কারখানার সাথে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার সরাসরি সেল্টার রয়েছে।
এ ঘটনায় ব্যাটারি কারখানার মালিক নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মাছুম আহম্মেদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, ক্ষতিকারক ব্যাটারী কারখানার গড়ে উঠার কারনে ধামগড় ইউনিয়নবাসী নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পরেছে। অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা বিষাক্ত কারখানা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ৫ আসনের এমপি আলহাজ¦ সেলিম ওসমান ও জেলা প্রশাসক মহদয়ের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো: মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, এ ধরনের ক্ষতিকারক কারখানার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং মালিকদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।