ব›ন্দর প্রতিনিধি: বন্দরে জমি ক্রয়-বিক্রয় ও মাটির ব্যবসা একক নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে ইটভাটার মালিক মোতালিব হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ৮ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর অবশেষে মুছাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাকসুদের অন্যতম সহযোগী ওই মামলার ২নং এজাহারভ’ক্ত আসামী নবী(৪৬)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১২ এপ্রিল রোববার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ সানারপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে মোতালিব হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাকসুদের ছেলে শুভ বাহিনীর সদস্য ইসমাইল ওরফে ইছা এখনো অধরা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত নবী শাসনেরবাগ গ্রামের আব্দুল জলিল ওরফে জলু মিয়ার ছেলে। ২০২১ সালের ৩১ আগষ্ট রাতে শাসনেরবাগ এলাকায় মসজিদের সামনে ব্যবসায়ী মোতালিবকে ছুরিকাঘাতে নৃশংস ভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে চেয়ারম্যান মাকসুদ বাহিনী ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ বাহিনী সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র। নিহত ইটভাটার মালিক মোতালিব উপজেলার শাসনেরবাগ গ্রামের মৃত আব্দুল রাজ্জাক মিয়ার ছেলে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, উপজেলার মুছাপুর ইউপির শাসনেরবাগ সহ আশপাশের গ্রামের কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। এসব ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ করেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাজাকার পূত্র মাকসুদ হোসেন। এই এলাকায় বন্ধু ট্রেডার্স নামে একটি নতুন ইটভাটা গড়ে তুলে মাকসুদ চেয়ারম্যানের ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ। ওই ইটভাটা গড়ে তুলে শুভ ও মাকসুদ চেয়ারম্যান মাটি কাটা ও জমির ব্যবসা একক নিয়ন্ত্রণে নিতে এলাকায় গড়ে তুলে এক সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী বাহিনী। শাসনেরবাগ এলাকায় শুভ বাহিনীর প্রধান ইসমাইল ইছা এবং চেয়ারম্যান বাহিনীর প্রধান ইছার ভাই নবী। শাসনেরবাগ এলাকার ব্যবসায়ী মোতালিব তিনি নিজ এলাকায় নিজ জমিতে গড়ে তুলেছে ইটভাটা। নিজের ইটভাটার জন্য ইট তৈরী করতে জমি ক্রয় মাটির ব্যবসা শুরু করে। কয়েকবছরে বছরে বিপুল সংখ্যক জমি কিনে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করতো মোতালিব। একক ভাবে মাটি কেটে মাটির ব্যবসা ও ২২ শতাংশ জমি কিনেই চেয়ারম্যান মাকসুদ ও তার ছেলে শুভ বাহিনীর রোষানলে পড়েন মোতালিব।
জমি বিক্রির দালালী ও জমি সংক্রান্ত বিরোধে জের ধরে ২০২১ সালের ৩১ আগষ্ট রাতে মোতালিব শাসনেরবাগ বাইতুন নুর জামে মসজিদ থেকে এশার নামাজ পড়ে আলীমুদ্দিন প্রধানের বাড়ির সামনে রাস্তার ওপর পৌঁছান। এসময় রাজাকার পূত্র মাকসুদের সহযোগী নবী ও তার ছেলে শুভ সহযোগী ইসমাইল ওরফে ইছাসহ ১০-১২ জন মিলে মোতালিবকে এলোপাথারি ভাবে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মাঠিতে লুটিয়ে পড়েন।এসময় পত্যক্ষদর্শীরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষনা করেন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত মোতালিব মিয়ার স্ত্রী মাকছুদা বাদী ইসমাইল ইছা ও তার ভাই নবীকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকান্ডের পর থেকে ইসমাইল ইছা ও তার ভাই নবী চেয়ারম্যান মাকসুদের নিয়ন্ত্রণে আত্নগোপনে থাকলেও পুলিশের বিষেশ কৌশলে ৮ মাস পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাতে সিদ্দিরগঞ্জ সানারপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার ২ নং আসামি নবীকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে ১নং আসামি ইসমাইল ইছা শুভ নিয়ন্ত্রণে এখনো আত্নগোপনে রয়েছে।
এদিকে ৩০ লাখ টাকার চাঁদা না দেওয়ায় ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য সফুরউদ্দিনকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তুলে টর্চার সেলে নির্যাতনের পর হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে মাকসুদ চেয়ারম্যানের পূত্র শুভ ও তার বাহিনী। এ ঘটনায় সফুরউদ্দিন মামলা করায় ক্ষিপ্ত মাকসুদ ও তার ছেলে শুভ বাহিনী। দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি নানা ধরণের হুমকি দমকি অব্যহত রয়েছে। মাকসুদ চেয়ারম্যান ও তার ছেলে শুভ যে কোনো সময়ে লাঙ্গলবন্দ বাজার, মদনপুর, কুড়িপাড়াসহ সম্ভব্যস্থানে সফুরউদ্দিন মেম্বারকে হত্যা করবে বলে আশঙ্কা তার পরিবারের।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই মো. ফয়সাল জানান, মোতালিব হত্যা মামলার তদন্ত এর আগে আরো দুই অফিসার তদন্ত করেছেন। নবীকে গ্রেপ্তারের পর আমাকে তদন্তকারি কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব দিয়েছেন। মামলার সকল আসামিকে গ্রেপ্তারের পর চার্জসীট দাখিল করা হবে। যদি এ হত্যাকান্ডের তদন্তে কেউ জড়িত থাকা প্রমান পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে।