সোহাগ মিয়া স্টাফ রিপোর্টার
সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ লোকও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরো মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কারুশিল্প ও লোকজ উৎসব উপলক্ষে আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারী) সকাল ১১টায় সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরী ভবন সেমিনার কক্ষে স্থানীয় সাংবাদিক ও সুধীজনের সাথে মতবিনিময় সভা করছেন ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলম। আগামী ১৮ জানুয়ারী থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারী ম্যাসব্যাপী লোকজ ও কারুশিল্প মেলার উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এ মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলম এর সভাপতিত্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারাজানা রহমান, এডিশনাল এসপি আসিফ ইমাম, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক একেএম আজাদ সরকার, কর্মকর্তা একেএম মুজাম্মিল হক মাসুদ, ট্যুরিস পুলিশ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন, সোনারগাঁও সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও সুশীল সমাজের সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
দেশীয় সংস্কৃতির উজ্জীবন ও প্রসারে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের অন্যতম কর্মযজ্ঞ মাসব্যাপী কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব আয়োজন হয়। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ধারাবাহিক ভাবে জাতীয় পর্যায়ে লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের বর্ণিল আয়োজন করে আসছে। বাংলার প্রাচীন রাজধানী ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ের প্রাণকেন্দ্রে আয়োজিত মেলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিথযশা কারুশিল্পীগণ জীবন জীবিকার অন্বেষনে তাঁদের নিজ নিজ পেশার সম্ভারে পসরা সাজান। কারুশিল্পীদের সৃষ্টিশীল কর্মের উপস্থাপন, ঐতিহ্যবাহী বাউল ও লোকসংগীত, লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ খেলাধুলার প্রচার প্রসারের পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতি লালন ও দেশীয় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে এ মেলার আয়োজন। মাসব্যাপী এ মেলা চলবে ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।
দেশীয় সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনী, লোকজীবন প্রদর্শনী, পুতুল নাচ, বায়স্কোপ, নাগরদোলা,গ্রামীণ খেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পীদের তৈরী বাহারি পণ্যসামগ্রী এবং উদ্যোক্তাগণের কারুপণ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। মেলায় সাধারণ স্টল ও কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনীর ৩২টি স্টলসহ সর্বমোট ১শ টি স্টল রয়েছে। এতে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রথিতযশা ৬৪ জন কারুশিল্পী সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
সোনারগাঁয়ের জামদানী, মৌলভীবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, মাগুরা ও ঝিনাইদহের শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ী ও মৃৎশিল্প, কক্সবাজারের ঝিনুকশিল্প, রংপুরের শতরঞ্জি, ঠাকুরগাঁয়ের বাঁশের কারুশিল্প, কাঠের চিত্রিত হাতি-ঘোড়া, পুতুল,কুমিল্লার খাদিশিল্প, তামা-কাঁসা- পিতলের কারুশিল্প, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠির কারুশিল্প, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা পুতুল, বগুড়ার লোকজ খেলনা ও বাদ্যযন্ত্র কারুশিল্পীগণ মেলায় অংশ নিবেন।
মাসব্যাপী লোকজ উৎসবের প্রতিদিনের সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানমালায় লোকজ মঞ্চে পালাক্রমে বাউলগান, পালাগান, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালী, হাসনরাজা, লালন, শাহ আব্দুল করিম, রাধারমণের গান, গম্ভীরা, আলকাপ, পুঁথিপাঠ, উকিল মুন্সি, পালাগান, ও মাইজভান্ডারীসহ বিভিন্ন ধারার লোকগীতি।
দলীয় লোকসংগীত, লোকনৃত্যের পরিবেশনায় থাকবে গীতিনৃত্য, মহুয়া, ময়মনসিংহের গীতিকা, পালাগান ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দলীয় পরিবেশনা ও বিভিন্ন দলীয় লোকসংগীত গোষ্ঠীর পরিবেশনা। প্রতি শুক্রবার ও শনিবার বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা লোকজীবন প্রদর্শনী ও গ্রামীণ খেলা। যেমন- কানামাছি, এলাডিং-বেলাডিং, বউচিসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা।
তাছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশেষ দল বা গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিলুপ্ত প্রায় গ্রামীণ খেলার আয়োজন।
প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি উত্তর উত্তর নতুন প্রজন্মের কাছে ধারন করাতেই বাংলাদেশ লোকও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের মূললক্ষ্য। লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ ও কারুশিল্প উৎসব উপলক্ষে সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বর রং-তুলির আঁচড়ে নতুনত্ব সাজে সাজানো হয়েছে।