নারায়ণগঞ্জের বন্দরে শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীর দখল ও এলোমেলোভাবে নৌযান নোঙর করে রাখার ফলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে নৌপথ। এতে বিঘ্ন ঘটছে নৌযান চলাচল, সেই সাথে অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে নৌ চ্যানেল। অবৈধ দখল এবং বিশৃংখলভাবে জাহাজ নোঙরের কারণে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে একটি চ্যানেল। এর ফলে শীতলক্ষ্যায় ঘটছে ঘন ঘন নৌ দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। গত দুই বছরে বড় দুটি লঞ্চ দুর্ঘটনাসহ অর্ধডজন নৌ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক যাত্রী। নৌপথ সরু হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা বাড়লেও তা দেখার যেন কেউ নেই।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকায় একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর প্রায় দুই ডজন ক্লিংকারবাহী ও সিমেন্ট বাহী জাহাজ দিনের পর দিন ফ্যাক্টরীর সামনে শীতলক্ষ্যা নদীতে নোঙর করা থাকে। এতে নৌপথ অত্যধিক সরু হয়ে পড়ায় ঐ পথে নৌ চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া মদনগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর একটি বিশাল অংশ দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে বন্দরের একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ও ডকইয়ার্ডের বিরুদ্ধে। তিনটি প্রতিষ্ঠান অবৈধ ভাবে নদী দখল করে রাখায় বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু সংলগ্ন নদী সরু হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। ফলে ব্রীজের সামনে যে কোন সময় নৌ-দুর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। দুই বছর আগে এখানে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সাবিত আল হাসান নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে প্রাণ হারান ৩৫ জন যাত্রী।
এলাকাবাসী জানান, ২০নং ওয়ার্ডের বন্দরের মাহমুদনগর এলাকায় নদীর বিশাল জায়গা দখল করে আলিফ ডকইয়ার্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। আলিফ ডকইয়ার্ডের পাশেই মদনগঞ্জ সামিট পাওয়ার দীর্ঘ দিন ধরে শীতলক্ষ্যার নদী একটি বিশাল অংশ অবৈধ ভাবে দখল করে সেখানে লোহার জেটি তৈরি করেছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, বিআইডব্লিউটিএ’র চরম উদাসিনতায় শীতলক্ষ্যা নদীর বিশাল জায়গা অবৈধ দখলে চলে গেলেও জমি উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর তলদেশে প্রচুর বালু জমা পড়েছে। এতে নাব্যতা হারিয়েছে নদী।
উল্লেখ্য যে, ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সামনে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সাবিত আল হাসান নামে একটি লঞ্চ ডুবে ৩৪ জন নারী পুরুষের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া ২০২২ সালের ২১ মার্চ এমভি রূপসীর সাথে একই রুটে চলাচলকারী অপর একটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে একটি লঞ্চ ডুবে ১১ জনযাত্রীর সলিল সমাধি ঘটে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার জানান, নৌরুট সংকুচিত হওয়ায় জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সর্ব প্রথম ব্রীজের পূর্ব পাশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সে সাথে দুই পাশে ড্রেজিং করে বালু সরাতে পারলে নদী তার আগের রূপ ফিরে পাবে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক শহীদুল্লাহ জানান, অচিরেই নদীর দুই তীরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।